শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছেড়ে দেশের বাড়ি গিয়েছে দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। রাজধানীর বাসা-বাড়িতে কোরবানির পশুর গোশত প্রস্তুত করার ব্যস্ততা। এর মধ্যে কিছু মানুষের ঈদ কাটছে পুরোপুরি ভিন্নভাবে, পেশাগত দায়িত্বপালন আর জরুরি সেবা দিতে তারা এই ঈদের দিনেও নিবেদিত প্রাণ।
রাস্তায় গাড়ির চাপ একেবারেই হালকা থাকায় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের ট্রাফিক বক্সে বসে কিছুটা দম নিচ্ছিলেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সেকেন্দার আলী।
তার বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওরে। ঢাকায় থাকেন আজিমপুরে একটি কোয়ার্টারে। সেখানেই ঈদের নামাজ পড়ে, সেমাই খেয়ে চলে এসেছেন ডিউটিতে।
পুলিশ সদস্য সেকেন্দার আলী জানান, গত ঈদে ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন, তাই এই ঈদে দায়িত্বপালন করছেন। পরিবার ছাড়া এরকম ঈদ কেমন লাগে এই প্রশ্নে হাসিমুখে সেকান্দার বলেন: আমরা তো এসবে অভ্যস্ত। তবুও পরিবারের লোকজন ফোন করে যেতে বলছে। কারণ বাড়ি কাছেই। তবে এভাবে ঈদ করতে ভালোই লাগছে, রাস্তা হালকা হয়ে গেছে। বাড়ি যাওয়া মানুষকে পার করে দিতে পেরেছি, জনগণকে পারাপার করিয়ে দেয়াই আমাদের কাজ, কাজের মধ্যেই আমাদের ঈদ আনন্দ।
ট্রাফিক বক্স থেকে বের হতেই দেখা হয় গণপরিবহন শ্রমিক আসাদুল ইসলামের সঙ্গে। মোহাম্মদপুর থেকে এয়ারপোর্টগামী একটি বাসে চালকের সহকারী তিনি। প্রতিদিনের মতো আজও বাসে যাত্রী তুলছেন ডেকে ডেকে। তবে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সেকেন্দার আলীর মতো ভালো লাগছে না তার। কারণ প্রথমবারের মতো বাড়ির বাইরে, পরিবার ছেড়ে ঈদ করছেন ঢাকায়।
আসাদুল বলেন: আমার বাড়ি নাটোরে, বাড়ি যাই নাই। বাড়িতে বউ-বাচ্চারা ঈদ করছে, আর এখানে আমি, কষ্ট লাগছে তাই, কারণ প্রথমবারের মতো তাদের ছাড়া ঈদ করছি। ওখানে আনন্দ করতাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে।
বাসটিতে উঠে কথা হয় আসাদুলের চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু তার ‘ওস্তাদ’ বাসচালক সাব্বির হোসেন সাগরের সঙ্গে। সাগরের বাড়ি বরগুনা। সহকারির মতো তিনিও এবার প্রথমবারের মতো ঈদে পরিবার ছেড়ে বাইরে আছেন। তাই এবারের ঈদ তার কাছে,“নতুন লাগছে”।পাঞ্জাবী না পরলেও সাব্বিরের গায়ে উজ্জ্বল রঙের নতুন শার্টটিই ঈদের আমেজ ছড়াচ্ছে।
ঈদের দিনে এক ভিন্ন চিত্র দেখা যায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের (পঙ্গু হাসপাতাল) জরুরি বিভাগে।
পশু কোরবানি করতে গিয়ে আঘাত কিংবা মাংস বানাতে গিয়ে চাপাতি-ছুরির আঘাত নিয়ে আসছে রোগীরা। রোগীদের ব্যান্ডেজ-প্লাস্টার, ইনজেকশন দেয়ার মাঝে সিনিয়র স্টাফ নার্স পঙ্কজ অধিকারী জানান, ঈদের দিন এখানে দায়িত্বরতদের বেশির ভাগ নার্স-চিকিৎসকই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। এমনিতে প্রতিদিন আঘাতপ্রাপ্তদের সামলাতে হয় তাকে। তবে আজকের খুশির দিনেও এতো আহতকে সামলাতে খারাপ লাগার কথা জানান তিনি।তিনি বলেন: বেশির ভাগ আহতই আসছেন কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুত করতে গিয়ে। জবাইয়ের পশু শোয়াতে গিয়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন। তবে বেশির ভাগই মাংস প্রস্তুত করতে যেয়ে। আজ আসা ৯৫ শতাংশ রোগীই পশু জবাই ও মাংস বানাতে গিয়ে আহত হওয়া। সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৪০ জনেরও বেশি আহতকে অপারেশন থিয়েটারে নিতে হয়েছে।
ঈদে অর্থোপেডিক হাসপাতালের এক্স-রে রুমে ব্যস্ত ফয়েজ আহমেদ
এই হাসপাতালের ১০৭ নম্বর কক্ষে রোগীদের এক্স-রে করায় ব্যস্ত চিকিৎসক মোহাম্মদ ফয়েজ আহমেদ।
রোগীর চাপ সামলানোর ফাঁকে তিনি বলেন,‘আমাদের এখানে লোক কম। যারা এক ঈদে যায়, তারা আরেক ঈদে ছুটি পায় না। আমি গত ঈদে ছুটি পেয়েছিলাম এবার দায়িত্ব পালন করছি। আমার বাড়ি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া। বউ-বাচ্চারা এমনিতে ঢাকায় থাকে, কিন্তু ঈদে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। কারণ ঈদের আগের রাত থেকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাকে এখানেই থাকতে হবে। রাতে বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছিলাম। সকালে ঈদের সেমাই-ফিরনি খাওয়া হয়নি, ডিম সেদ্ধ খেয়েছি। ঈদের দিনে পরিবারকে ছাড়া এরকম আহতদের মধ্যে টানা দায়িত্বে একটু কষ্ট তো লাগেই, কিন্তু তারপরও ডিউটি তো ডিউটিই।’
তার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় এই প্রতিবেদককে এক মিনিট দাঁড়াতে বলে নিজের কক্ষে গেলেন তিনি। বেরিয়ে এলেন পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে, করলেন ঈদের কোলাকুলি।
Leave a Reply